বাউল সম্রাট ছাড়া ১১ বছর

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৩:২২ অপরাহ্ণ

মরমী সাধক, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর)। ২০০৯ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই মরমী কবি। সিলেট ও তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের উজালধলে শাহ আব্দুল করিম স্মরণে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না।

‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘তুমি মানুষ আমিও মানুষ’, ‘প্রাণে সহে না দুঃখ বলব কারে’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ওরে ভব সাগরের নাইয়া’ সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফ্রেবুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইব্রাহীম আলী ও মা নাইওরজান। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে তিনি ধলআশ্রমের পাশের গ্রামে স্বপরিবারে স্থানান্তির হন।
দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী, যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে বেড়ে উঠা শাহ আব্দুল করিমের গান শুরুতেই ভাটি অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও শহরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে। আর্থিক অসচ্ছলাতার কারণে কৃষিকাজে বাধ্য হলেও কোনো কিছুই তাকে গান রচনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

জানা যায়, দারিদ্র পরিবারের সন্তান শাহ আবদুল করিম বাল্যকালে শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ পাননি। বারো বছর বয়সে তিনি নিজ গ্রামের এক নৈশ বিদ্যালয়ে কিছুকাল পড়াশোনা করেন। সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরে নিজের চেষ্টায় তিনি স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। শাহ আবদুল করিম শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্তব, দেশাত্মবোধক ও বাউল গানসহ গানের বিভিন্ন শাখায় সাবলীল বিচরণ করেছেন। তিনি দেড় সহ¯্রাধিক গান রচনা ও তাতে সুরারোপ করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদক (২০০১)।
লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ বলেন, শাহ আব্দুল করিমের গানের কথা খুবই অসাধারণ। দোতারা হাতে তিনি সারাটা জীবন মেহনতি মানুষের পক্ষে লড়াই করে গেছেন। তিনি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় গণসংগীত গেয়ে লাখ লাখ তরুণকে উজ্জীবিত করেছেন। সবকটি গান কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। এসব গানে তিনি মানুষ ও জীবনের কথা তুলে ধরেছেন।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে মহান এই সাধকের চির প্রস্থানের দিনে এবার কোনও আয়োজন নেই। শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বাবার প্রয়াণ দিবসে কোনও আনুষ্ঠানিক আয়োজন নেই। তবে অনলাইন প্লাটফর্মে ভার্চুয়ালি বিভিন্ন স্থান থেকে করিম ভক্তরা তার গান পরিবেশন করবেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, জায়গার অভাবে কোনও বছরই বাবার মৃত্যুবার্ষিকী ভালোভাবে পালন করতে পারি না। বাড়িতে যে জায়গা আছে সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় না। বাড়ির সামনে কালনী নদীর পাশে আমাদের কিছু জায়গা আছে। জায়গাটি ভরাট করে দিলে ভালোভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতো। এজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে জেলার সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুর পাবেল বলেন, করোনার কারণে কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে শাহ আব্দুল করিম কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জলজোছনার সুর গ্রন্থে বাউল সম্রাটের সব গান শুদ্ধ স্বরলিপির মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।