সিলেটজুড়ে নতুন আ ত ঙ্ক বজ্রপাত !

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৪, ৪:০৪ অপরাহ্ণ

চলতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন- যেসব অঞ্চলে বজ্রপাত হবে এর মধ্যে রয়েছে সিলেট বিভাগ। এ আশঙ্কা সত্যি করে সিলেটে দু-একদিন পরপরই ঘটছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা।

গত শুক্রবার (১৭ মে) এক দিনেই মাত্র ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেটের দুটি উপজেলায় বজ্রপাতে এক শিশুসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নে বজ্রপাতে খালেদ আহমদ (২০) নামে এক তরুণ এবং এর আগে ওইদিন দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামে রেদোয়ান আহমদ (১২) নামে এক শিশু মারা যায়।

নিহতদের মধ্যে খালেদ গোয়াইনঘাট উপজেলার কুতুবনগর গ্রামের মৃত ইসমাইল আলীর ছেলে। তিনি বাজারে একটি টেইলার্স পরিচালনা করতেন।

আর রেদোয়ান নোয়াগ্রামের মাসুক আহমেদের ছেলে এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

খালেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ডৌবাড়ি বাজারে খালেদের টেইলার্স ব্যবসা আছে। সেখানে কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে জাইবলের পাশের রাস্তায় বজ্রপাতে তিনি নিহত হন।’
এর আগে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে বাবার সঙ্গে শিশু রেদোয়ান ও তার ভাই বাড়ির পাশে মাছ ধরতে যায়। তখন হালকা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত হচ্ছিল। এ সময় বজ্রপাত রেদোয়ানের শরীরে আঘাত করে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে ৬ মে সিলেট বিভাগে একদিনে বজ্রপাতে ৩ জন মারা যান। সিলেটের গোয়াইনঘাটে বজ্রপাতে করম আলী (৬৭) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার ছৈলাখেল এলাকার মৃত আফসর উদ্দিন মোল্লার ছেলে। ৬ মে দুপুরে উপজেলার ছৈলাখেল গ্রামে বাড়ির পাশেই খোলা ময়দানে পালিত গরু আনতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

একই দিন মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুল হাই নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের পুদিনাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, কৃষক আব্দুল হাই হাওড়ে ধান কাটছিলেন। এ সময় কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এছাড়া ৬ মে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বজ্রপাতে হালিমা খাতুন (৪৪) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সাটিয়াজুড়ি ইউনিয়নের দারাগাও গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী। রবিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির উঠানে বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়। জানা যায়, ওইদিন বিকেল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রপাত শুরু হয়। হালিমা খাতুন নামের ওই নারী তার বাড়ির উঠানে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে তার উপর বজ্রপাত হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার তাপ বেশি হওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হবে। আর একই সঙ্গে বর্ষাকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি হবে। অন্যদিকে বজ্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং অসচেতনতার কারণে মৃত্যুও বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বালাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু এড়াতে আগাম সতর্কতা এবং আবহাওয়া বার্তা খুব জরুরি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম পিয়ার-রিভিউ জার্নাল হেলিয়ন-এ ‘বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম)-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ প্রাণহানি বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে ঘটে, যার মধ্যে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ( সিলেট) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে।