শুভ জন্মদিন সালমান

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:০১ অপরাহ্ণ

 

আশরাফ আহমেদ :: প্রায় একযুগ আগের কথা । সবে প্রাইমারিতে পড়াশোনা শুরু করেছি। গ্রামে তখনও বিদ্যুৎ ছিল। ছিল না রঙিন টেলিভিশনও৷ হাতেগোনা দু’চারটে বাড়িতে সাদাকালো টিভির দেখা মিলতো। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতেও ১৪ ইঞ্চির একটা টেলিভিশন ছিল। ১৪ ভোল্টের ব্যাটারি দিয়ে চালানো হতো Sony ব্যান্ডের সাদাকালো টিভিটা। আর চ্যানেল বলতে একটাই ছিল বিটিভি। সাদাকালো টেলিভিশনের সেই বিটিভিই ছিল পর্দায় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম । তখন থেকেই বাংলা সিনেমা দেখার গল্প শুরু। সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্র এই দু’দিনই বাংলা ছবি দেখানো হতো। পরবর্তীতে এই তালিকায় শনিবারও যুক্ত হয়। বিচিত্র সব ছবি দেখে সুস্থ বিনোদনে মেতে উঠতাম সবাই। ছবি শেষে, হিরো -হিরোইন, ভিলেন, কাকে কার ভাল লাগে, ছবির কোন দৃশ্যটি সুন্দর, এসব নিয়ে আমাদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক চলত।

বাংলা সিনেমার জগতে অনেক নায়ক ছিল ঐসময়েও। এখন তো আর হিসেবেই নেই৷ তারপরও আমার কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল সালমান নামের নায়কটি৷ বরাবরই সালমান শাহের, বাচনভঙ্গি, পোশাক পরিচ্ছেদ, এ্যাকশন, স্টাইল সবকিছুই আকৃষ্ট করতো ।নিজের প্রিয় নায়ক হয়ে উঠে সিলেটের এই সন্তান।সেই থেকেই সালমান শাহের প্রতি দুর্বলতা কাজ করতো। যেকারণে সপ্তাহের তিনটা দিবষেই বিটিভিতে কামনা করতাম আজকে যেন সালমানের ছবিটাই দেয়৷

কোন মুভি একবার দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয়বার আর দেখতে ইচ্ছে করে না।সালমান শাহের ২৭ টি চলচ্চিত্রই অনেক বার দেখা হয়ে গেছে। তারপরও যেন প্রিয় নায়কের অভিনীত ছবির প্রতি আগ্রহ এতোটুকুও কমে নাই। ২৪ বছর আগে সালমান শাহ যতটা স্টাইলিস্ট ছিলেন দুইযুগ পর এসেও সালমানের মতো এমন নায়ক এখনও বাংলা সিনেমায় তৈরি হয় নি। সালমান আধুনিক ছিলেন, তবে তার কোন ছবিতে ছিল না অশ্লীলতার বিন্দুমাত্র চাপও। যেকারণে সালমানের রোমান্টিক ছবিগুলোও ছোট বড় সবাই মিলে একসাথে বসে দেখতে কোন ধরনের সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন আধুনিকতার নামে চলে অশ্লীলতা, আর যতসব ভণ্ডামি।

ঢাকাই চলচিত্রের এক মুকুটবিহীন রাজা ছিলেন সালমান। খুবই অল্প সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রাজত্ব করেছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা । বেঁচে থাকলে ২০২০ এ তার বয়স হতো ৪৯ বছর। কিন্তু তা নয়, কোনো এক অভিমানে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালে চলে যান না ফেরার দেশে।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ার নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী। ইমন নামে অভিনয় জীবন শুরু হয় বিটিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে।১৯৯৩ সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে আসেন চলচ্চিত্রে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন আমার মতো কোটি ভক্তের ফেভারিট হিরো । আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে তার ছবির নাম। কেউ কেউ হয়তো মনের অজান্তে গুনগুনিয়ে ওঠেন সালমানের অভিনীত ছবির কালজীয় সেই গানগুলো । স্টাইল আর অভিনয় দিয়ে বদলে দিয়েছিলেন বাংলা ছবির প্রেক্ষাপট। ক্যারিয়ারের অল্প সময়ে মাত্র ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন। তার প্রায় প্রতিটি ছবি ছিল ব্যবসাসফল। সালমানের সর্বমোট মুক্তিপ্রাপ্ত ২৭টি। যার মধ্যে ১৪টিতেই তার নায়িকা ছিলেন শাবনূর।

মাধ্যমিকে উঠার পর মুভি কিংবা নাটক তেমন একটা দেখতাম না৷ কেন জানি এসবের প্রতি ফিলিংসটাই কমে গিয়েছিল। তবে সালমানের ছবি আমাকে বরাবরই কাছে টানতো। এইতো গেল কয়দিন আগের কথা। বাসায় টেলিভিশন চলছে। অন্য একটা রুমে বসে পত্রিকা পড়ছি। হঠাৎই শুনা যায়”তুমি মোর জীবনের ভাবনা ” দৌড়ে চলে আসি টেলিভিশনের সামনে। আরেকজনের সিট দখল করেই বসে পড়ি ছবি দেখতে। এদেখে বাকিরা বলেছে, এই তুই তো এসব দেখিছ না।যা গিয়ে পত্রিকা পড়। আমার উত্তর দুর যা আজাইড়া কথা বন্ধ কর, যাইহোক সবকিছুর পর, সালমান শাহের ছবি চলছে!

দেশের স্বাধীনতার বছরে জন্ম নেওয়া সালমান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আদালত থেকে তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হলেও তার পরিবার ও ভক্তদের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা এখনো বিচারাধীন। আজ সেই নায়কের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৪৯ বছরের পা রাখতেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করা সিলেটের এই সন্তান। সালমানের জন্মদিনে একটাই কাম্য দ্রুত উদঘাটন করা হউক সালমানের মৃত্যু রহস্য। সালমান বেঁচে থাকবেন তার ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।সবশেষ রবীন্দ্রনাথের গানের সেই লাইনটাই বলতে হচ্ছে তুই বরে নিররে হৃদয়ে মম..

 

লেখক:
আশরাফ আহমেদ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এমসি কলেজ সাংবাদিক সমিতি