দিরাইয়ে অবৈধ প্লাষ্টিকের ছাঁই তৈরীর একাধিক কারখানা! হুমকির মুখে মৎস্য ও বৈচিত্র

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

                                                                                                       

 

 বিশেষ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ প্লাষ্টিকের ছাঁই( মাছ শিকারের এক ধরনের ফাঁদ)তৈরীর একাধিক কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় অসাধু লোক এসব কারখানায় নিষিদ্ধ প্লাষ্টিকের বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে তৈরী ছাই অবাধে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি ও সরবরাহ করে আসছে।

উপজেলা মৎস্যকর্মকর্তা শরিফুল আলম বলছেন, ‘এসব প্লাষ্টিকের তৈরী (মাছ শিকারের ফাঁদ) ছাই শুধু মাছেরই ক্ষতি করে না হাওরের জলাশয়ে জীববৈচিত্র এবং পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ, এসব প্লাষ্টিকের ব্যবহার বন্ধ না করা গেলে হুমকির মুখে পড়বে কৃষি, মৎস্য ও জীব বৈচিত্র। তিনি বলেন,ইউ এনও মহোদয়কে নিয়ে অচিরেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, একাধিক অসাধু ব্যাক্তি কয়েক বছর যাবৎ পৌরসদরের একধিক স্থানে অবৈধ প্লাষ্টিকের ছাই( মাছ শিকারের ফাঁদ) তৈরীর কারখানা গড়ে তুলেছে। এসব কারখানায় জৈষ্ঠ্য মাস থেকে পরিবেশ ধ্বংসকারী অবৈধ প্লাষ্টিকের ছাই তৈরী ও অবাধে বিক্রি করছে। কৌশলে মাছ শিকারের জন্য এসব প্লাষ্টিকের ছাই গ্রামের একধরনের জেলেদের কাছে সরবরাহ করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হাওর পাড়ের বিশাল জনগোষ্ঠী মাছ শিকারে ছাই ব্যবহারে ঝুকে পড়ছে। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব প্লাষ্টিক কৃষি জমির উর্বরা শক্তি ধ্বংসের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে মাটির গুনাগন নষ্ট করে ফেলবে। অচিরেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারলে হুমকির মুখে পড়বে কৃষি মৎস্য ও জীব বৈচিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, পৌর সদরের ২নং ওয়ার্ডে পুর্ব দিরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন দিরাই-চন্ডিপুর রোডে একটি ট্রাকে নিষিদ্ধ প্লাষ্টিকের ছাই তোলছেন কয়েকজন শ্রমিক। প্রতিদিন ভোর বেলা থেকেই এক এক করে ট্রাক বোজাই করে দিচ্ছেন বলে জানান তারা। পাশে একটি কলোনী রয়েছে, কলোনীর একটি রোমেই গড়ে তোলা হয়েছে নিষিদ্ধ পরিবেশ ধ্বংসকারী প্লাষ্টিকের তৈরী ছাই। কারখানায় প্রবেশ করলে দেখা যায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিরিবিলি কাজ করছেন। ছবি তোলার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা সবাই এক সাথে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘কোন ধরনের ছবি ও ভিডিও করা যাবে না, মালীকদের নিষেধ রয়েছে।’ মালীক কে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, কাউন্সিলর প্রদীপ ভাই, নয়ন ও গৌতম। আমরা চুক্তিতে কাজ করি, প্রতি পিচে মুজুরি তিন টাকা করে নেই বলে জানায় শ্রমিকরা। এ বিষয়ে কথা বললে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ বলছেন, ‘কিছুটা আছি,বাদ দেন, এখনতো শেষ মৌসুম নিউজ করে লাভ নেই।’

এদিকে, পৌর সদরের থানারোডস্থ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পপুলার এন্টার প্রাইজ এর পেছনের রোম ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্লাষ্টিকের ছাই তৈরী ও বিক্রি করে আসছেন নরোত্তমপুর গ্রামের তোয়াহিদ মিয়া। মোহন চৌধুরী অবৈধ প্লাষ্টিকের ছাই তৈরীর বিষয় জানতে পারলে তিনি তোয়াহেদকে অবৈধ ব্যবসা বন্ধের কথা জানিয়ে দেন। এরপর তোয়াহেদ ছাই তৈরীর প্লাষ্টিকের বিভিন্ন সরঞ্জাম অন্যত্র সরিয়ে নেয়।

তোয়াহেদের সাথে যোগাযোগ করলে প্লাষ্টিকের ছাই তৈরীর বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, ছয় বছর যাবৎ এ ব্যবসা করছি, প্রতি পিচ ছাই পাইকারী ৩২ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান।

এ পর্যন্ত দুই লক্ষাধিক ছাই তৈরী ও বিক্রি করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এর সাথে জড়িত দোওজ গ্রামের বাপ্পু বলেন, মৌসুম শেষে আমরা শুরু করেছি, জৈষ্ঠ্য মাসে শুরু হয় পুরো মৌসুম, আমি ও তোয়াহেদ এক সাথে কাজ করছি বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সফি উল্লা জানান, মৎস্য কর্মকর্তা আমাকে বলেছে, এব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি, এদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

                                                                                               

 

জাগোভাটি/জি লি/৩০-০৯-২০২০/