পৌরভবন উদ্বোধনকে ঘীরে র্নিবাচনী কৌশল- এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রীয়া

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৩২ অপরাহ্ণ

                                                                                           

নিজস্ব প্রতিবেদক   ::দীর্ঘ ২১ বছর প্রতীক্ষার পর ভাড়ামুক্ত হয়ে আপন ঠিকানায় ফিরল দিরাই পৌরসভা।প্রধান অতিথি ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপির হাতে ফিতা কাটাট মধ্যদিয়ে উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পৌরভবনটির। এদিকে পৌরভবনটির উদ্বোধনকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এলাকার মানুষ ছাড়াও খোদ আওয়ামীলীগের  অনেক নেতাকর্মীরা বলছেন, দিরাইয়ে পৌরসভার নতুন ভবন উদ্বোধনের আড়ালে আগাম নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে স্থানীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দিরাই পৌরসভা নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর মাসেই হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামীলীগের একটি অংশ বলছে সেই পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্বোধন অনুষ্ঠানটিকে নিজের মূল মিশনের  কাজে লাগাচ্ছেন মেয়র মোশাররফ মিয়া।

জানা গেছে, করোনা বিধি উপেক্ষা করে পৌরভবন উদ্বোধন কে ঘিরে শুরু থেকেই নিজের অনুসারীদেরকে নিয়ে জোর প্রচারণায় নামেন মেয়র মোশাররফ মিয়া । তারই অংশ হিসেবে পৌরসভার ৯জন কাউন্সিলর ও ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের প্রত্যেককেই ১০০ টি করে দাওয়াত কার্ড প্রদান করা হয়। যেখানে ,শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই ১৩০০ মানুষকে অফিসিয়ালি ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় । সাথে মেয়র মোশাররফ মিয়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে  নিজ অনুসারীদের অনুষ্ঠানে  উপস্থিত থাকতে বলেন। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মেয়র তার অনুসারিদের নানা কৌশলে  অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন বলে অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ।

অবাক করার বিষয় হলো সাধারণ মানুষের ঢল নামলেও এসব ইউনিয়নের কোন চেয়ারম্যানকেই অনুষ্ঠানে দেখা যায় নি। যেকারণে এই মহামারি করোনা কালে সরকারি বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানটিতে হাজারো মানুষের সমাগম করান মেয়র মোশাররফ মিয়া ।

স্থানীয় আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন আগামী পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় কার্ড ভাগিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবেই এই করোনার সময়েও মেয়র তার অনুসারিদের একত্রিত  করার মাধ্যমে নিজের দাপটে আচরণ তুলে ধরে এমপির মন জয়ের  কৌশল করেন । তবে স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, দল ও নেতার নাম ভাংগিয়ে দাপট ও ব্যাক্তিগত ফায়দা হাসিলের দিন ফুরিয়ে গেছে।

অন্যদিকে, অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই তার অনুসারীরা মেয়র মোশাররফ মিয়ার নাম উচ্চারন করে বিভিন্ন নির্বাচনী শ্লোগান দিতে দেখা যায়। পুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি রুপ নেয় একটি নির্বাচনী প্রচার শোডাউনে। ‘মোশাররফ ভাই, ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই, মেয়র মোশাররফ মিয়াকে আগামী নির্বাচনে দেখতে চাই, দেখতে চাই ” স্লোগানের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিকে একটি নির্বাচনী মিছিলে রুপান্তরিত করা হয় ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগত মানুষের একাংশ

এদিকে মেয়র মোশাররফ মিয়া পৌর ভবন উদ্বোধনের সুযোগটি কাজে লাগাতে গিয়ে শতভাগ কাজ সম্পন্নের আগেই তড়িঘড়ি করে পৌরভবনটি উদ্বোধন করেছেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

একাধিক কাউন্সিলর ও পৌরসভার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তার সাথ আলাপ করলে জানা যায়, ২ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার ৭৮২ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরভবনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান মের্সাস বেলাল এন্টারপ্রাইজ ।  এসময় ঠিকাদার র্মোশদ বেলাল আহমেদ কাজটি আনুষ্টানিক ভাবে হস্তান্তর করেছেন  কিনা জানতে চাইলে, ভবনটির গিরিলসহ কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে জানিয়ে, তারা বলেন,যতদুর জানি এখনো কাজটি আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হয়নি।এ ব্যপারে টিকাদার র্মোশেদ বেলাল আহমদের (০১৭১২১২৪৮৯০) নাম্বারটিতে গত কদিন যাবত ফোন দিলেও অজানা কারণে তিনি সেটি রিসিভ করছেন না।

কাজ হস্তান্তরের বিষয়ে মেয়র মোশাররফ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে সিলেটভিউ কে তিনি জানান,রং গিরিলসহ টুকিটাকি কিছু  কাজ  বাকি রয়েছে। এখনো শতভাগ কাজ শেষ হয়নি স্বীকার  করে মেয়র বলেন,কাজটি পূর্ণভাবে শেষ হয় নি যেকারণে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ হস্তান্তর করতে পারেনি। শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরেই ভবনটি হস্তান্তর করা হবে ।

এদিকে শতভাগ কাজ শেষ হওয়া্র আগেই তড়িগড়ি করে ভবন উদ্বেধণ করায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ সহ সাধারণ জনগণের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে । বিষয়টি নিয়ে কথা বললে অনেকেই মেয়র মোশাররফ মিয়ার প্রতি ক্ষোভ ঝারেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে  দিরাই  পৌরসভার  প্যানেল মেয়র বিশ্বজিত রায় করোনা বিধি মানা হয়নি স্বীকার করে বলেন,উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো উচিত হয় নি। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে অযথা একটি বিতর্কের জন্ম দেওয়া হল।

জাগোভাটি/আআ/প্র স/৩০-০৯-২০/