কিশোরগঞ্জে সাইফুল হত্যাকান্ডে, দুই আসামী গ্রেফতার করল পিবিআ

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

 

ছাতক প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের এক বছর ১০ মাস পর সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবকের হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুই আসামি মো. আব্দুর রহমান ওরফে সুমন (৩২) ও মো. ইব্রাহিম খলিল (২৭) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।আদালতে তারা দুজনেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। নিহত সাইফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের স্বল্প যশোদল খাসপাড়া গ্রামের মো. খুরশিদ উদ্দিনের ছেলে। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামির মধ্যে মো. আব্দুর রহমান ওরফে সুমন একই ইউনিয়নের যশোদল কোনামাটি গ্রামের মো. হাফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং মো. ইব্রাহিম খলিল একই গ্রামের মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ জেলা পিবিআই এর এসআই মো. হারুন-অর-রশিদ চৌধুরী জানান, সাইফুল পাওনাদার সুমনের তিন হাজার টাকা ধার পরিশোধ করতে না পারায় সুমন তার চাচাতো ভাই ইব্রাহিমকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রথমে মো. আব্দুর রহমান ওরফে সুমনকে গ্রেপ্তারের পর সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়। পরবর্তিতে গত ৪ অক্টোবর মো. ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেপ্তারের পর সেও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এছাড়া মামলার প্রতক্ষ্যদর্শী চারজন সাক্ষীও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পিবিআই সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে সাইফুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধেশ্বরী বাড়ি সংলগ্ন ইব্রাহীম খলিলের অটোবাইকের গ্যারেজে নিয়ে আসামিরা মারপিট করে। এতে সাইফুল অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পাঁচ মিনিট পর ওইদিনই রাত ৯টার দিকে সাইফুল মারা যান।
এ ঘটনায় পরদিন ১৩ ডিসেম্বর নিহত সাইফুলের পিতা মো. খুরশিদ উদ্দিন বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মাসুদুর রহমান ৪ মাস ২০ দিন পর আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। মামলার বাদী মো. খুরশিদ উদ্দিন চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন জানালে আদালত মামলাটির তদন্ত পিবিআই এর উপর ন্যস্ত করেন। পিবিআই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম জানান, আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নামে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম ও সুমন পূর্বপরিচিত ছিল। পরিচয়ের সূত্র ধরে সাইফুল ইসলাম তিন হাজার টাকা সুমনের কাছ থেকে ধার নেয়। ধারের টাকা যথা সময়ে পরিশোধ না করে সুমনের সাথে সাইফুল যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। সাইফুল ও সুমনের তিন হাজার টাকা সংক্রান্ত লেনদেনের বিষয়টি সুমনের চাচাতো ভাই ইব্রাহিম জানতো। ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ইব্রাহিমের গ্যারেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাইফুলের পথ আটকে সুমনের তিন হাজার টাকা দাবি করে ইব্রাহিম। সাইফুল টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইব্রাহিম তাকে জোর করে তার গ্যারেজে নিয়ে যায়। সেখানে সাইফুলকে আটকে রেখে ইব্রাহিম ফোন করে সুমনকে তার গ্যারেজে ডেকে আনে। সুমন ঘটনাস্থলে গিয়ে কারো সাথে কথা না বলে সাইফুলকে কিল, ঘুষি ও চড় থাপ্পর মারতে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে থাকা হানিফ নামে এক ব্যক্তির অনুরোধে সুমন মারপিট বন্ধ করে। পরে হানিফ জামাল নামে দোকানীর কাছ থেকে এক হাজার পাঁচশত টাকা ধার করে সুমনকে দেয় এবং ৩/৪ দিনের মধ্যে বাকি এক হাজার পাঁচশত টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয়। এতে সাইফুল ছাড়া পেলেও ইব্রাহীম ও সুমনের টানাহেঁচড়া এবং মারপিটের ফলে সে গ্যারেজেই অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে যায়। এরপর রাত ৯টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতজনিত কারণে সাইফুলের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সাইফুল হত্যাকান্ডের আসামি চিহ্নিত করে গ্রেফতারকারী পিবিআই কর্মকর্তা উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশীদ চৌধুরী।এসআই হারুন অর রশীদ ছাতক থানায় দায়িত্বরত থাকাকালে এখানেও সাফল্যের সাথে একাধিক অজ্ঞাত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন। বিশেষ করে দিন-দুপুরে ছাতক শহরের মেহতাজ মার্কেটের সম্মুখে ছিনতাই হওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংক গ্রাহকের কয়েক লক্ষ টাকা অতি স্বল্প সময়ে উদ্বার ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে প্রশংসিত হয়েছিলেন । এই ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছিলেন পুরো ছাতকবাসী। কৃতিত্বপির্ণ এই সাফল্যে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল সংবর্ধনা ও ক্রেষ্ট প্রদান করেন।

জাগোভাটি /১৬/১০/২০