অবৈধ দখলের কবলে নদী ও খাল

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২০, ৬:৪৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক::সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহর ও গ্রামীন বাজর সংলগ্ন নদীর পাড় অবৈধভাবে দখল করে দালান কোটা নির্মান করছেন প্রভাবশালী মহল। সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে স্থায়ী দালান ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তারা। আশির দশক থেকে শুরু করে বন্দোবস্তোর নামে স্থানীয় ভুমি অফিসের কতিপয় অসাধু ভুমিকর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে দখল প্রক্রিয়া শুরু করেন প্রভাবশালীরা । বিগত দিনে দিরাই বাজার সংলগ্ন হাইস্কুল রোডস্থ কালনী নদীর পাড় দখল করে অন্তত অর্ধশত দালান ঘর নির্মান করা হয়েছে।
এদিকে নদীর পাড় দখলের পাশাপাশি পৌর শহরে সরকারি খাল দখলের প্রতিযোগীতা চলছে। বিস্তৃত বিশাল জলরাশির খাল মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে নেই। ইতিমধ্যে পৌরসভার অন্তর্গত অন্তত ৩০টি ছোট বড় সরকারি খাল অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। সরকারি এসব খাল ভরাট করে প্রভাবশালীরা নির্মান করেছেন বাসা-বাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
তবে ইউএনও মো: সফি উল্লাহ জানান, খাল ও নদীর পাড় দখল করে সরকারি ভুমিতে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরী করা হচ্ছে, বাজার ও হাইস্কুল রোডে কিছু দোকান একসনা বন্দোবস্তো দেয়া হয়েছে, কিছু বাতিল করা হয়েছে, নতুন রেকর্ড হয়ে আসছে,যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ইতি মধ্যে দিরাই উপজেলার শ্যমারচর বাজার ও বাসষ্ট্যান্ডে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সবগুলোই করা হবে। নদীর পাড়ে অবৈধভাবে তৈরি করা স্থাপনগুলো উচ্ছেদ করে নদীগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। যত প্রভাবশালীই কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় নদী, খালের তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করোনার আগে শুরু হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে এই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। এই উচ্ছেদ অভিযান আবারও শুরু হবে। সঠিকভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মূল করাই উদ্দেশ্য আমাদের।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল মিয়া বলছেন, বাজার সমিতির অফিস ঘরের জন্য সরকারি জায়াগা পাচ্ছি না, অথচ খাল আর নদীর পাড়ে সরকারি জায়গা বন্দোবস্তের নামে অবৈধ দখল করে দালান কোটা নির্মান করে ভাড়া দিচ্ছেন প্রভাবশালী লোকজন। আমরা এসিল্যান্ড মহোদযের সাথে কথা বলেছি, তিনি বলছেন, তালিকা করা হচ্ছে, শীঘই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
ব্যবসাী নেতা সালেহ উদ্দিন জানান,ফেরি ফেরি দোকান করার জন্যে বাজার ব্যবসায়ীদের একসনা বন্দোবস্তো দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি, নদী ও খাল দখল করে সরকারি এসব ভুমিতে প্রশাসনের চোখের সামনেই স্থায়ী দালান কোটা নির্মান করা হচ্ছে।
স্থানীয়না জানান, বিগত দিনে সরকারি খাল অবৈধভাবে দখলকারিদের বিরেুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন ভুমি অফিসের অনেক অসাধু কর্মকর্তা । আর এর মাধ্যমে তারা আর্থিক ফায়দা লুটছেন। ফলে দখলকারিরা নির্বিঘেœ এসব সরকারি খাল মাটিভরাট করে দালানকোটাসহ নদীর পাড় দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করে ভোগদখল করছেন।
আর্থিক ফায়দা হাসিলের বিষয়ে অস্বীকার করে স্থানীয় ভুমি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজিৈনতক হস্তক্ষেপের কারনে সরকারি ভুমি অবৈধদখল টেকানো যায় না। উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও আবারও দখল হয়ে যায়। এদিকে পৌরকর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি এসব খাল ও খাল রকম ভুমি এবং ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ভুমি জেলা প্রশাসকের তত্ত¡াবধায়নে থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। পৌরসভার বাসিন্দারা বলছেন, এসব খাল দখল মুক্ত করে পানি নিষ্কাশনের পথ উন্মুক্ত করতে হবে, জলাধার বন্ধ হলে ভবিষ্যতে পৌর এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ১নং খাস খতিয়ানে পৌরসভাধিন নরশিং খাল, শিকারিবাড়ির খাল, কদমতলার খাল, ফুতের খাল, জুম্মা বাড়ির খাল ও দিরাই উচ্চবিদ্যালয়ের পূর্বপাশেরখালসহ চান্দপুর, দোওজ, দাউদপুর ও রাধানগর এই চার মৌজায় সরকারি অন্তত ৩০ টি খালের আগের যে রুপ ছিল তা আর নেই, এসব খাল দিয়ে একসময় বিশাল জলরাশির ¯্রােত প্রবাহিত হতো, বড় বড় নৌকা চলাচল করতো কালের আবর্তে এসব খাল আজ বিলুপ্তির পথে এবং প্রভাবশালীরা এসব খাল ভরাট করে গিলে ফেলেছেন। এরমধ্যে ৯৯ নং জে এলস্থ ১ নং খতিয়ানের চান্দপুর মৌজার ১৭২৫ নং দাগে অবস্থিত খাল, যার ভুমির পরিমান কাগজে ২.২০ একর, ১০৮১ নং দাগে অবস্থিত খালে ভুমির পরিমান ৬.৫০ একর, ১১৩৫ নং দাগে অবস্থিত খালে ৪.৪০ একর, ২৬৬১ নং দাগে অবস্থিত খালে ২৩.১১ একর, ২৬৬৭ নং দাগে অবস্থিত খালে ১.২৬ একর, ২৬৭৮ নং দাগে ১.৪০ একর ভুমি থাকলেও বাস্তবে এর অধিকাংশই অবৈধ দখলে রয়েছে। একই অবস্থা ৯৫ নং জে এলস্থ দোওজ মৌজায়। এখানে ১নং খতিয়ানের ৬৬১ নং দাগে অবস্থিত খালে কাগজে এর ভুমির পরিমান ০.৭৫ একর, ৪৫০ নং দাগে অবস্থিত খালের ০.৫৭ একর, ৫৬৪ নং দাগে অবস্থিত খালে ০.৫৪ একর, ৬৮১ নং দাগে অবস্তিত খালে ০.৮৬ একর ভুমি থাকলেও বাস্তবে তা নেই । এসব খালের মধ্যে অধিকাংশ খালে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থাও নেই ফলে ঝরাবদ্ধতার কবলে পড়ছে পৌরবাসি। ৯৪নং জে.এল এর দাউদপুর মৌজায় ১নং খতিয়ানের ১৭০ নং দাগে অবস্থিত খালের ভুমির পরিমান ১ .০০ একর, ৩৬ নং দাগে অবস্থিত খালে ভুমির পরিমান ০.৪৬ একর কাগুজে থাকলে এর অধিকংশই ভরাট কওে বসত ভিটা নির্মান করা হয়েছে। ৯৩ নং জে,এল এর ১নং খতিয়ানের ১নং দাগে অবস্থিত খালে ১.৭০ একর,২২১ নং দাগে০.৪৬ একর।

সরেজমিনে দেখাযায়, সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত অনেক ভুমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে, এসব ভুমিতে নির্মান করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। আর রাজনৈতিক দাপটেই এসব খাল দখল করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে জনস্বার্থে এসব খাল উদ্ধার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। প্যানেল মেয়র বিশ্বজিত রায় জানান, আইনী জটিলতার কারনে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারছে না, এসব খাল ১নং খতিয়ানের সরকারি খাস জমি, যা জেলা প্রশাকের তত্ত¡াবধানে রয়েছে, তা পৌরসভার অনুকুলে হস্তান্তর করা হলে জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

জাগোভাটি/ জি লি/১৮-১০-২০/