চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে সিলেটের ওসমানী -কানে শুনবে বধিরও

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২০, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

জাগোভাটি ডেস্ক ::চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে সিলেটের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল

জন্মগত বধির বা শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা শুরু নিয়ে সিলেটের রোগীদেরকে গত অক্টোবরে সুখবর আসে। যেখানে বলা হয়েছিল ‘সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগত বধির ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য চালু হচ্ছে ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’। যার ফলে জন্মগত বধিরও শুনবে কানে।’

তবে এবার সত্যিই সে সুখবরের দ্বারপ্রান্তে সিলেটবাসী। কারণ, কানে কম শোনা রোগীদের জন্য সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি শুরু হচ্ছে খুব শীঘ্রই। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রকল্পের অধীনে চলতি অর্থবছরেই হবে এর বাস্তবায়ন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুসুর রহমান।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক সভায় মিলিত হন সংশ্লিষ্টরা।

এসময় হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুসুর রহমান বলেন- ‘আমাদের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সকল সাপোর্ট থাকবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের প্রয়োজন ট্রেইন্ড চিকিৎসক, অডিওলজিস্ট ও অডিটরি ভারবাল থেরাপিস্ট। বিভিন্ন কমিটি গঠন করে খুব শীঘ্রই প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।

এছাড়া হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়- সিলেটবাসীর জন্য এমন একটি সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকল সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

উক্ত সভায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রকল্পের কর্মসূচি পরিচালক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট নাক-কান-গলারোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল হুদা নাঈম।

বধিরতা দূরীকরণে এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে ডা. নাঈম প্রথমে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে ধন্যবাদ জানান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী, অত্র কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ময়নুল হক, হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুসুর রহমান, উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় এবং সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন- ‘আমাদের এখন লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন। প্রকল্পের অংশ হিসেবে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট অপারেশন থিয়েটার, হিয়ারিং সেন্টার, অডিটরি ভারবাল থেরাপিস্ট রুম এবং কাউন্সিলিং রুমের কাজ অচিরেই শুরু হবে। সিলেটবাসীর জন্য অপেক্ষা করছে এক সুবর্ণ সুযোগ। সরকার বধিরতা নিরসনে এমন প্রকল্প হাতে নেয়ায় নাক-কান-গলা বিভাগের পক্ষ হতে তিনি আবারো বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

উক্ত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নাক-কান-গলারোগ ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাগণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই অপারেশনের মাধ্যমে যে সব শিশু জন্ম থেকেই কানে শুনবে না, তাদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ও ডেডিকেটেড সার্জারি টিম দ্বারা কানের পেছনে অপারেশনের মাধ্যমে ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হবে। এতে অপারেশনের পরে কোন প্রকার জটিলতা তৈরি না হলে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর মাধ্যমে তাকে প্রোগ্রামিং ও ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তার শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনা হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শিশুদের কানের পেছনে ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগিয়ে ব্যয় বহুল এ অপারেশন প্রক্রিয়াটির নাম ‘কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ সার্জারি।

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে প্রতি হাজারে দুইজন শিশু বধিরতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৬০০ শিশু বধিরতা নিয়ে জন্মায় এবং প্রায় সমসংখ্যক জনগোষ্ঠী শ্রবণশক্তি নিয়ে জন্মালেও জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময়ে বধিরে পরিণত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে বধিরতার হার শতকরা নয় দশমিক ছয় ভাগ।

জাগোভাটি /আআ/১২-১১-২০/